স্টাফ রিপোর্টার ॥ শায়েস্তাগঞ্জের নসরতপুরে স্কুলছাত্র মো. তানভীর হত্যা মামলায় তিন জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। সেইসঙ্গে একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক স্বপন কুমার সরকার আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন। নিহত তানভীর (১৯) শায়েস্তাগঞ্জের নসরতপুরের ফারুক মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলেন পশ্চিম নসরতপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে উজ্জ্বল মিয়া (২৫), নুরপুর গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে শান্ত (২৬) ও বাছিরগঞ্জ বাজারের জলিল কবিরাজের ছেলে জাহিদ মিয়া (২৮)। তিন বছরের কারাদন্ড প্রাপ্ত লিমন মরমা গ্রামের মৃত মরম আলীর ছেলে।
সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সরওয়ার আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আসামিরা পরিকল্পনা করে নির্মমভাবে তানভীরকে হত্যার পর লাশ পুঁতে রেখেছিল। একদিন পরই তাদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সেইসঙ্গে হত্যার কথা স্বীকার করেছে তারা। তাদের তথ্যমতে লাশ ও আলামত উদ্ধার করা হয়। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলার রায় দেন বিচারক।’
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, তানভীরের প্রতিবেশী উজ্জ্বল বাড়ির পাশে সবজি ও ফল চাষ করতেন। সেই জমিতে চাষ করা কলা উজ্জ্বল বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যান। তখন তানভীরের বাবা ফারুক মিয়া উজ্জ্বলকে বলেন, তুই এই কলা চুরি করে এনে বাজারে বিক্রি করছিস। এ নিয়ে বাগবিতন্ডা হয়। পরে বাজারে সালিশ বৈঠকে উজ্জ্বলের বাবা সৈয়দ আলীকে অপমান করেন ফারুক। সবার সামনে বাবাকে অপমানের কথা ভুলতে পারেননি উজ্জ্বল। প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে সে। এরই মধ্যে উজ্জ্বলকে ইরাকে পাঠিয়ে দেন বাবা। ছয় বছর পর দেশে ফেরেন। পরিকল্পনা করতে থাকেন কিভাবে বাবাকে অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া যায়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তানভীরকে প্রথম দফায় অপহরণের চেষ্টা করেন উজ্জ্বল এবং তার সহযোগী জাহিদ। ওই যাত্রায় বেঁচে যান তানভীর। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি উজ্জ্বল, জাহিদ এবং শান্ত মিলে তানভীরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
উজ্জ্বলকে শান্ত জানান, তানভীরকে ঘরের বাইরে আনার দায়িত্ব তার। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শান্ত কৌশলে তানভীরকে ওই এলাকার পুকুর পাড়ে ডেকে আনেন। উজ্জ্বল ঘটনাস্থলে যান। একপর্যায়ে উজ্জ্বল তানভীরের মোবাইল নিয়ে নেন। সেখানে তানভীরের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস দেন উজ্জ্বল। এ সময় শান্ত এবং জাহিদ উভয়ে মুখ চেপে ধরে রাখেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পাশের পুকুরে লাশ নিয়ে যান। সেখানে পেটে ছুরিকাঘাত করেন যেন লাশ ভেসে না ওঠে। পরে তিন জন মিলে পুকুরের কাদামাটিতে লাশ চাপা দিয়ে রাখেন। এরপর তানভীরের বাবার মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে ৮০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন জাহিদ। সেই সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।